বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:১৫ অপরাহ্ন

যেভাবে পুলিশের জালে ‘শ্যুটার’ মাসুম

যেভাবে পুলিশের জালে ‘শ্যুটার’ মাসুম

0 Shares

ইন্দুরকানী বার্তা:
পুলিশের কাছে খবর ছিল, বগুড়ার খাজা নামে কোনো এক স্থানে অবস্থান করছেন ঢাকার শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে হত্যায় অভিযুক্ত ‘শ্যুটার’ মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ।

এরপর শুরু হয় শহরের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করা। অবশেষে জেলার চারমাথা এলাকার আবাসিক হোটেল খাজা থেকে গ্রেপ্তার হন সেই মাসুম।

রোববার সকালে অভিযুক্ত মাসুমকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির দুই কর্মকর্তা পরিদর্শক তাজমিলুর রহমান ও উপপরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম (রবি)।

দৈনিক বাংলাকে এসব তথ্য জানান এসআই খোরশেদ আলম। তিনি জানান, কীভাবে অস্ত্র ও বাহিনী ছাড়াই অভিযানে নামেন তারা।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত শনিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে শহরের চারমাথা বাসটার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে খাজা আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি হোটেলটির দ্বিতীয় তলার ১০১ নম্বর কক্ষে ‘মামুন’ পরিচয়ে অবস্থান করছিলেন। গ্রেপ্তার মামুন তার বাল্যবন্ধুর মাধ্যমে হোটেলটিতে উঠেছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাথমিকভাবে মাসুম জানিয়েছেন, হোটেলে থাকা তার বন্ধু এ হত্যার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সেই সুবাধে বগুড়ায় যাওয়া-আসা ছিল তার। পুলিশের অভিযানের ঠিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে তার সেই বাল্যবন্ধু হোটেল থেকে চলে যান।

এসআই খোরশেদ বলেন, ‘ঘটনার পরপরই গত ২৫ মার্চ বগুড়ার ওই হোটেলে আসেন মামুন। ২৬ মার্চ ডিবি অফিস থেকে বগুড়া পুলিশকে প্রথমে জানানো হয়, শহরের সাতমাথা ‘খাজা’ নামের কোনো জায়গাতে শ্যুটার মাসুম অবস্থান করছেন। এ তথ্য জানার পরই খাজার সন্ধান শুরু করে বগুড়া পুলিশ।

‘একপর্যায়ে চারমাথা এলাকায় খাজা আবাসিক হোটেলের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপরই দ্রুত সময়ের মধ্যে ইন্সপেক্টর তাজমিলুর ও আমি মোটরসাইকেলে করে সেখানে পৌঁছাই।’

তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তকে কিছু বুঝে ওঠার সময় না দিয়েই হোটেল ম্যানেজারকে ঢাকা থেকে পাঠানো মাসুমের ছবি দেখানো হয়। অনেকটা নিশ্চিত হওয়ার পরই আমরা হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১০১ নম্বর কক্ষে ঢুকি।’

খোরশেদ আলম জানান, সেখানেই মাসুম নিজের পরিচয় ও ঢাকায় গুলি করে আওয়ামী লীগ নেতা ও কলেজছাত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে থাকা হত্যাসহ অন্য মামলার কথাও স্বীকার করেন তিনি। এরপর তাকে হাতকড়া পরানো হয়।

পরে ইন্সপেক্টর তাজমিলুর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাসুমকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠাতে বলেন।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এসব কিছু ঘটে সকাল সোয়া ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে মাত্র ১৫ মিনিট সময়ে। পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স তাদের পাশেই থাকায় মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে তারা উপস্থিত হন।

তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি তিনি ঢাকায় লুকিয়ে রেখেছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও তিনি হাতিরঝিলে নষ্ট করেছেন।

এরপরও ১০১ নম্বর রুমের কক্ষটিতে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তল্লাশি চালানো হয়। পরে সকাল ৮টার দিকে মাসুমকে সদর থানায় আনা হয়।

এসআই খোরশেদ আলম জানান, আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার কথা স্বীকার করলেও কলেজছাত্রী সামিয়ার মৃত্যুর খবর তিনি টিভিতে দেখে জানতে পারেন। তার উদ্দেশ্য ছিল বগুড়া থেকে জয়পুরহাট হয়ে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যাওয়া।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, মাসুম গ্রেপ্তারের সময় খুব স্বাভাবিক ছিলেন। সাবলীলভাবে তার অপরাধ স্বীকার করেছেন। একবারের জন্যও তিনি ভয় পাননি।

বগুড়া সদর থানার ওসি সেলিম রেজা বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

‘আমাদের কাছে শনাক্ত করতে শুধু খাজা নামটি ছিল। তবে দ্রুত সময়ে তার অবস্থান আমরা অ্যানালগ পদ্ধতিতেই শনাক্ত করি। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু ও ২৪ বছর বয়সী কলেজছাত্রী প্রীতি।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণিবিতানের সামনে খুন হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী। আলোচিত এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন তৎকালীন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু।

টিপু ও প্রীতি হত্যার পরের দিন শুক্রবার সুরতহাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে পুলিশ। এতে বলা হয়, টিপুর শরীরে গুলির ১৩টি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। আর প্রীতির শরীরে মিলেছে দুটি ক্ষতচিহ্ন।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap